তালেবান সরকারের সহযোগিতায় দিল্লিতে আফগান দূতাবাসের দায়িত্ব নিয়েছেন জাকিয়া ওয়ারদাক। ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অধীনে একজন নারী কূটনীতিকের পদে নিয়োগ পেয়েছেন জাকিয়া ওয়ারদাক, যিনিএখন ভারতের দিল্লিতে আফগান দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করছেন।
এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, কারণ তালেবান সরকারের নীতি অনুযায়ী নারী শিক্ষা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত।বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দিল্লিতে আফগান দূতাবাসের দায়িত্বনিয়েছেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
জাকিয়া ওয়ারদাক আফগানিস্তানের সাবেক আশরাফ ঘানি সরকার, বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হানিফআতমারের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবনও কূটনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তিনিভারতে আফগান কনসাল হিসেবে নিয়োগ পান এবং ভারতেও কিছু বিতর্কিত ঘটনাতে সম্পর্কিত ছিলেন, তবে তার নিয়োগএকদিকে যেমন তালেবান সরকারের নারীবিদ্বেষী নীতির বিপরীতে, তেমনি এটি আফগান কূটনীতির নতুন অধ্যায়ও বটে।
জাকিয়ার পটভূমি
জাকিয়া ওয়ারদাকের জীবন একটি আকর্ষণীয় কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী। তার বাবা, জেনারেল আবদুলআলি খান ওয়ারদাক, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
জাকিয়া নিজে কাবুল পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারে মাস্টার্স করেছেন এবং পরবর্তীতে স্বামীর সঙ্গেদেশটির নির্মাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন। একসময় তিনি নিজে একটি নির্মাণ কোম্পানি চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরসেনাবাহিনীর প্রকল্পে কাজ করতেন।আফগান রাজনীতিতে পদার্পণের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, যদিও নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি।
তবে সে সময় তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে আফগান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে, যার ফলে তিনি ভারতের মুম্বাইয়েআফগান কনসাল জেনারেল হিসেবে নিয়োগে পান।
তালেবানের প্রেক্ষাপটে নারী কূটনীতিকের নিয়োগ
দেশটির তালেবান সরকার নারী শিক্ষা ও নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে শক্ত অবস্থান নিয়েআসছে। তারা আফগানিস্তানে মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণি পরবর্তী শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে এবং নারীদের কর্মক্ষেত্রেও বড় বাধারমুখে পড়তে হচ্ছে।এমন পরিস্থিতিতে একজন নারী কূটনীতিক হিসেবে জাকিয়া ওয়ারদাকের নিয়োগ অনেকের জন্যইআশ্চর্যের বিষয়। এর মাধ্যমে তালেবান সরকার নারীদের কূটনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে, যদিও এর নীতিগত ব্যাখ্যা স্পষ্ট নয়।
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক
ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকেও স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি কেন তারা তালেবানের প্রতিনিধিদের গ্রহণ করেছে। তবে মনে করাহচ্ছে, ভারত আফগানিস্তানে তার অবকাঠামো ও বিনিয়োগ রক্ষায় তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছে। ভারতগত বছর আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য সরবরাহের জন্য কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আকারেসব সেবা এখনো চালু হয়নি।
মুম্বাই বিমানবন্দরের সোনা কেলেঙ্কারি
প্রসঙ্গত, জাকিয়া ওয়ারদাক ২০২৪ সালে মুম্বাই বিমানবন্দরে একটি সোনা চোরাচালান কেলেঙ্কারিতে জড়ান, যেখানে তারসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা পাওয়া যায়। যার মূল্য প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার ছিল।
তবে তার কূটনৈতিক মর্যাদা থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়নি।জাকিয়া ওয়ারদাকের আফগানিস্তান ও তালেবানের প্রথম নারীকূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি একদিকে যেমন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসেরএকটি নতুন অধ্যায়, তেমনি এটি কূটনৈতিক পরিসরে এক নতুন ধরনের সম্পর্কের সূচনা হতে পারে। তবে, তালেবানসরকারের নারীদের প্রতি নীতির প্রতি এই পদক্ষেপ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ও হিন্দুস্তান টাইমস।