দিপা আক্তার
বিশেষ প্রতিনিধি
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্বরতা ১৯৭১ সালেরমুক্তিযুদ্ধে বাঙালির ওপর নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, একাত্তরের মতোই ছাত্র–জনতা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। টানা ৩৬ দিনেরআন্দোলনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি ) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম আলো আয়োজিত জুলাই–জাগরণ এবং জুলাইগণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেওএকাত্তরের ইতিহাস সুরক্ষা হলো না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী তরুণদের মূল্যায়ন করা হয়নি। মিথ্যার ওপর ভর করে ১৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। তারা ইতিহাস সুরক্ষা করেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্র–জনতা রুখেদাঁড়িয়েছিল বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনে অংশ গ্রহনকারী ছাত্র–জনতার মধ্যে অনেকে জীবন দিয়েছেন।
অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, আবার অনেকে অন্ধ হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আন্দোলনেআহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায়। এইতিহাস বিকৃত হতে দেয়া যাবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের মেয়েরা অংশ নিয়েছিল, তাদেরকেও মূল্যায়ন করতে হবে।ইতিহাস সুরক্ষা করতে হবে।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ছাত্র সমাজের প্রতি অতীতে অনেক অন্যায় করা হয়েছে। তাদের স্বপ্নআমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন সুযোগ এসেছে ছাত্র–জনতার আকাঙ্খা অনুযায়ী বাংলাদেশ গড়ার। সকলে মিলেইএ বাংলাদেশ গড়তে হবে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দারিজওয়ানা হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী জনতার আত্মত্যাগ আমাদের জন্য পরিবর্তিত বাংলাদেশ গড়ারদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে নিরপেক্ষভাবে সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করতে পারলেই এ আন্দোলনের সার্থকতা। তিনিবলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে গণতন্ত্র, অধিকার, এবং সমতার চর্চা অবাধ হবে। এই আত্মত্যাগেরমূল্যায়নে আমাদের জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে কোনো সংগঠন, ব্যক্তি, বা দলীয় বিবেচনাপ্রাধান্য পেতে পারে না।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ আন্দোলন প্রমাণ করে সহিংস স্বৈরাচারের পতন অবশ্যম্ভাবী এবং সেই পতন সবসময়লজ্জাজনক হয়। আমি মনে করি, জুলাই–আগস্টে যে অভ্যুত্থান ঘটেছে, তা আমাদের ছাত্রসমাজের অসীম সাহসিকতারউদাহরণ। শিক্ষার্থীরা যে কাজ শুরু করেছিল, আমরা শুধু তাদের পাশে থেকে সাহস দিয়েছি।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পাশে ছিলাম এবং থাকব।উপদেষ্টা বলেন, যখন নিহত ও আহতদের তালিকা দেখি, শুনিঅনেক শিক্ষার্থী জনতা আর কখনো চোখে দেখতে পারবেন না—এই অনুভূতিগুলো হৃদয় বিদারক। যেসব শিক্ষার্থীএকসময় ক্রিকেটার বা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখত, তারা আজ চোখের আলো হারিয়েছে।
আমরা শত চেষ্টা করেও তাদের চোখে আলো ফেরাতে পারব না।রিজওয়ানা বলেন, আমাদের প্রত্যয় হোক—গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, নিরাপদ একটি বাংলাদেশ গড়া, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাবে। যেসব সন্তানেরাজীবন দিয়ে এই পথ তৈরি করেছে, তাদের প্রতি এটি হবে প্রকৃত শ্রদ্ধা।তিনি বলেন, এই আয়োজন আমাদের আন্দোলনেরসাক্ষ্যপ্রমাণ ধরে রাখবে এবং নিশ্চিত করবে যেন এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বা চলাকালীন ঘটনাগুলো কেউ বিকৃত করতেনা পারে। আজকের এই আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার সংগ্রাম যেন আত্মত্যাগেরমহিমায় পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং প্রথম আলোরনির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অতিথিরা প্রদর্শনী ঘুরেদেখেন। প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ৩টা হতেরাত আটটা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে।
প্রদর্শনীতে প্রথম আলো ৩০টি ফটোগ্রাফী স্থান পেয়েছে। এছাড়া জুলাই আন্দোলনকালের ১৬ দিনের পত্রিকার প্রথম পাতা, জুলাই–আগস্ট উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যা, ১৫টি নিউজ কাটিং প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।আন্দোলনে ছয়শহীদের ব্যবহৃত পোষাক, জামা–জুতা, হাত ঘড়ি, সাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শনীতে রয়েছে।