বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
দ্য স্টার নিউজ ডেস্ক ,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে হলেরাজনৈতিক ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।খুনি–স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতেজনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন –উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই সেটাহলো–একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ। যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচেথাকবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী ) বিকেলে রাজধানীর মনিপুরী পাড়াস্থ খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে চব্বিশ’র ছাত্র–জনতারগণআন্দোলন চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আহত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটো সাংবাদিক ও তাদের পরিবারেরসদস্যদের সাথে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্তচেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উদ্যোগে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এ সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুররহমান রুমন।
তারেক রহমান বলেন, ‘যখনই দেশের ওপর স্বৈরাচার চেপে বসেছে ঠিক তখনই দেশে রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হয়েছে। গত১৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে এর বাস্তব চিত্র আমরা দেখেছি। এ সময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতা কুক্ষিগতকরে রেখেছিল। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করে অন্য দেশের নাগরিকদের স্বার্থ হাসিলেও তিনি (শেখ হসিনা) কাজ করেছেন।
‘আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতভাবে থাকবে’ উল্লেখ করে এবং রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩১ দফাপ্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় আড়াই বছর আগে দেশেরমানুষের সামনে আমরা ৩১ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি।
এ ৩১ দফা হচ্ছে–বিগত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পালিয়ে যাওয়া খুনি স্বৈরাচারী (শেখ হাসিনা সরকার) যেভাবে দেশকেধ্বংস করেছে, সেখান থেকে কীভাবে দেশকে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব তারই সুস্পষ্টপরিকল্পনা।’তারেক রহমান বলেন, বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকার কিংবা সরকারেরবাইরে সবার মনে রাখা দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুঁথিগত সংস্কার অনেকটাইঅকার্যকর।
সংস্কার কার্যক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার। নতুবাসংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।সংস্কার সফল করতে মানুষের সাথে সরাসরি জড়িত এমন লোকজনপ্রয়োজন, তা না হলে সংস্কার সফল হবে না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সফল সংস্কার অবশ্যই দেশেররাজনীতিবিদদের হাত ধরেই সম্ভব হবে।
তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। না হলে ষড়যন্ত্রের ডালপালাবাড়তেই থাকবে। কারণ, লুট করা পলাতকরা সেই টাকা ষড়যন্ত্রের পেছনে খরচ করবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানবলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অবশ্যই একটি মুখ্য বিষয়। তাই, ভোটেরঅধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে জনগণ তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেররাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, এসব কারণেই বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু ওনিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন। যত দ্রুত দেশে নির্বাচন হবে, দেশ ততো দ্রুত সঙ্কট মুক্ত হবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে কয়েকদিন পরে মানুষেরদু:খ কষ্টের সীমা থাকবে না।
তাছাড়া দেশের মানুষ চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার মতোসক্ষমতাও সবার নেই। এ কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর সরকারের নজরদারি প্রয়োজন।তিনি বলেন, দেশটা সবার, এ দেশএকক কারো নয়, জুলাই বিপ্লবে মানুষের ঢল তা প্রমাণ করেছে । জুলাই–আগস্টের কয়েক সপ্তাহের হত্যাকাণ্ডই প্রমাণ করে ১৫বছর কী পরিমাণ গুম–খুন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন রেখে নির্বাচন ছাড়াই বারবার সরকারগঠনের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। জনগণকেও তাদের সব ন্যায্য অধিকার থেকেবঞ্চিত করেছিল।ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ফটো সাংবাদিকদেরআন্তরিক অংশগ্রহণ ছিল বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, ফটো সাংবাদিকরা মানুষের দুঃখ–দুর্দশা তুলে ধরেন ছবির মাধ্যমে। কিন্তু গত ১৫ বছরের বিভিন্ন সময়ইচ্ছে থাকলেও তাদের অনেক সংবাদ প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। তাদের রাজনৈতিক অধিকারসহ অনেক অধিকার থেকেবঞ্চিত করা হয়েছে।অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনা কারো মধ্যেই অনুশোচনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ আবার ফিরে এলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বেরকোনো চিহ্নই রাখবে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব’ হত্যাকাণ্ডের বিচার ছাড়া অন্য কিছু এই জাতিমেনে নেবে না। বিএনপি এ বিচার করতে পারবে–এমন আস্থা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দেশেরমানুষের রয়েছে।আমরা বিএনপির পরিবার সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায়বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক আশরাফউদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ ও আরিফ রহমান বক্তব্য রাখেন।