পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
আরিফ খান শুভ
বিশেষ প্রতিনিধি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য ভারতীয় ভিসা পেতে সমস্যায় পড়া বাংলাদেশিদের জন্যচীন ঢাকার নিকটতম চীনা শহর কুনমিংয়ে দুই থেকে তিনটি হাসপাতাল মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া চীন সরকার ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে সরকারি মালিকানাধীন জমিতে একটি বৃহৎ সরকারি হাসপাতাল নির্মাণেসম্মত হয়েছে।তিনি তার সাম্প্রতিক চীন সফরের ফলাফল সম্পর্কে গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) মতবিনিময়কালেসাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, ভারতে ভিসা সমস্যা অব্যাহত থাকায় আমরা চিকিৎসার জন্য বিকল্প গন্তব্যখুঁজছিলাম। ভারতীয় ভিসার সমস্যার কারণে আমরা বিশ্বাস করি এটি একটি কার্যকর বিকল্প।
উপদেষ্টা বলেন, কুনমিং ইউনানের রাজধানী হওয়ায় ইউনানের ডেপুটি গভর্নর তার সঙ্গে দেখা করতে বেইজিং যান এবংবাংলাদেশি রোগীদের জন্য হাসপাতাল মনোনীত করার সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, আমি চীনা কর্তৃপক্ষকে ভিসা প্রক্রিয়াসহজ করার এবং বাংলাদেশি চিকিৎসাপ্রার্থীদের জন্য ভিসা ফি কমানোর অনুরোধ করেছি।উপদেষ্টা বলেন, চীন সরকারঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে সরকারি মালিকানাধীন জমিতে একটি বৃহৎ সরকারি হাসপাতাল নির্মাণে সম্মত হয়েছে।
আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি (এই উদ্দেশ্যে) প্রদান করব। সরকারি হাসপাতাল স্থাপন ছাড়াও চীনের সঙ্গেসরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় একটি তৃতীয় স্তরের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও তৈরি করাহয়েছে।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ের আমন্ত্রণে গত ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি বেইজিংয়ে সরকারি সফরেছিলেন।
তিনি তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য সাংহাই সফর করেন।তিনি বলেন, আমরাউন্নয়ন প্রকল্প এবং ব্যবসা–বাণিজ্যসহ আমাদের সকল দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।তিনি বেইজিংকে ঋণেরসুদের হার কমাতে এবং ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
তিনি জানান, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋণ পরিশোধের সময়কাল বাড়ানোর বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এবং সুদের হারকমানোর অনুরোধ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।উপদেষ্টা বলেন, আলোচনার সময় তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাঁধনির্মাণের বিষয়ে ঢাকার ‘বিশেষ উদ্বেগ’ উত্থাপন করেছেন। এই নদীটি চীন থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকরেছে।
তিনি বলেন, আমরা চীনকে এ বিষয়ে তাদের গবেষণা সম্পর্কে আমাদের অবহিত করার অনুরোধ করেছি।উপদেষ্টা বলেন, চীনা পক্ষ তাকে আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের পদক্ষেপ বাংলাদেশে জলপ্রবাহের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তিস্তা নদী প্রকল্পেসম্ভাব্য চীনা সহায়তা সম্পর্কে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি নেতিবাচক উত্তরদেন, ‘তিস্তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি’।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নবায়নকৃত চুক্তির সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য চলমান পর্যালোচনার পর ঢাকা এবং বেইজিং উভয়ইদ্বিপাক্ষিক জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা চুক্তি নবায়ন করতে সম্মত হয়েছে।তিনি বলেন, আমরা বেইজিংয়ের সঙ্গে আমাদেরমতামত শেয়ার করেছি এবং তারা তাদের মতামত আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছে। খসড়া চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে এটি সম্পন্ন হবে।হোসেন বলেন, তার সফরের সময় ‘ইয়ালুজাংবু–যমুনা’ নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ–সম্পর্কিত তথ্যবিনিময়ের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।